আমার দিনলিপি
কেন লিখছি জানিনা, হয়তো এ শুধুই নিজের সাথে কথা বলা..........
Tuesday, July 19, 2011
আমাদের অনুমতি ছাড়াই ফেইসবুক হোম পেজ এ বন্ধুদের আপডেট বন্ধ করে দিচ্ছে
২০১০ সালের শেষ দিক থেকে খেয়াল করছি, ফেইসবুক আমাদের অনুমতি ছাড়াই অনেক বন্ধুর নিউজ ফিড হোম পেজ এ প্রদর্শন বন্ধ করে দিচ্ছে। একটু বিস্তারিত বলিঃ যদি কিছুদিন ব্যস্ততার কারণে আমি আমার কোন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে না পারি অথবা সে আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে কিংবা আমরা কারো পোস্টে কমেন্ট অথবা লাইক না দেই তবে ফেইসবুকের অটোমেটেড সিস্টেম বন্ধুদের মাঝে নিউজ ফিড দেয়া বন্ধ করে দেয়। এটা অন্যায় এবং বন্ধুদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। হয়ত আমি ভাবি আমার সেই বন্ধু স্ট্যাটাস দেয় না, আর সে ভাবে নতুন ছবি আপলোড করলাম কিন্তু বন্ধু কমেন্ট দিল না। আমাদের অজান্তে এভাবে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে গুরুত্বপুর্ণ ফ্যান পেজ গুলোর আপডেট আমরা পাচ্ছি না। অনেকদিন থেকে Voluntary Blood Donors (V.B.D) নামে রক্তদান সংক্রান্ত একটি পেজ চালাচ্ছি। আমি এবং আশিক ভাই নিয়মিত খেয়াল রাখি, কেউ ওয়ালে রক্তের গ্রুপ, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর লিখলে আমরা ফ্যান পেজ এ স্ট্যাটাস দিয়ে দেই। এভাবে ভালোই চলছিল, অনেক Blood Donor পাওয়া যাচ্ছিল কারণ নতুন প্রজন্মের মাঝে অপরকে সাহায্য করা মানসিকতা রয়েছে। কিন্তু ইদানিং রক্তের চাহিদার কথা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিলে কোন response পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা খুবই হতাশ যে এভাবে একটি ভালো কাজ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে ফেইসবুকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। বিস্তারিত জানতে এই How Facebook Secretly Ends Your Relationships লিংকটি ভিজিট করুন।
Labels:
ফেইসবুক
Friday, October 15, 2010
"দেয়াল" (গল্প)
শ্যাওলা ধরা দেয়ালটি দেখেই বলে দেয়া যায় বাড়িটির বয়স তিরিশ বছরের কম নয়, বেশিও হতে পারে। কিছু কিছু জায়গায় ফাটল ধরে গেছে, কিছু ফাটল এত বড় যে ভালো করে খেয়াল করলে দেয়ালের ওপারের কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে। আসলে বাড়িটির বয়স পঁয়ত্রিশ বছর পার হয়ে গেছে, বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন বর্তমান বাসিন্দা আশফাক এর প্রয়াত বাবা। অন্যান্য অংশ সংস্কার করা হলেও পাশের বাড়ির সাথে যে সীমানা প্রাচীর আছে তা একবারও সংস্কার করা হয়নি।
দেয়ালের ওপারের বাড়িতে থাকে এক দম্পতি, তারা দুজনেই চাকরি করে অন্য শহরে, সকাল হলেই দুজনেই তাড়াহুড়ো করে কর্মস্থলে বেরিয়ে যায়। তাদের ছোট্ট মেয়ে পৃথা, দেখতে পুতুলের মত, বয়স সাড়ে তিন, তাকে সকালের খাবার খাইয়ে মা বেরিয়ে যায় কাজে, ফেরে সেই সন্ধের পর। বাকিটা সময় কাজের মেয়ে ফরিদা তার দেখাশোনা করে। ফরিদার দেশ পৃথার নানার বাড়ির পাশের গ্রামে, পৃথার নানীই বাধ্য হয়ে ফরিদাকে এই বাড়ির জন্য দিয়েছেন, মেয়ে-জামাই দুজনে বাইরে গেলে ছোট্ট পৃথাকে কে দেখবে? প্রথমে দেখার দায়িত্ব তারই ওপর ছিল, কিন্তু তিনি নিজ সংসার ছেড়ে আর কতদিন থাকবেন? গ্রামের বাড়িতে এত কাজ যে তার ছেলের বউরা সব একা সামলাতে পারেনা, তাই মেয়ের বাড়ি গিয়ে বেশি দিন থাকা হয়ে ওঠে না।
পৃথার মায়ের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হবার পর মা যখন কর্মস্থলে যেত তখন সে নানীর কাছেই থাকতো, কখনো তার দাদী এসেও তার দেখাশোনা করত, কিন্তু বিপত্তি বাধে একটু বড় হবার পর মা বেরিয়ে যাবার পর-পরই কান্না জুড়ে দিত উচ্চস্বরে, কিছুতেই থামানো যেত না, এক সময় কাঁদতে-কাঁদতে ছোট্ট মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়তো। এভাবে কিছুদিন চলার পর পৃথা মাকে ছাড়া থাকতে অভ্যস্ত হতে লাগলো। এরপর পৃথার নানী ফরিদাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসে নিজে বিদায় নিলেন। এখন সকাল বেলা মা টিভিতে কার্টুনের চ্যানেল চালু দিয়ে কর্মস্থলে চলে যায়, ফরিদা ঘরের কাজকর্ম করে। এখন সমস্যা একটাই দুপুর বেলা পৃথাকে খাওয়ানো, খাবার নিয়ে ফরিদা সামনে গেলেই পৃথার একটাই কথা “আম্মু আসলে খাব”, কিছুতেই তাকে খাওয়ানো যায়না, অনেক ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাজা-রাণীর গল্প বলতে বলতে ধীরে ধীরে খাওয়াতে হয়। কিন্তু এভাবে একা থাকতে থাকতে পৃথা অন্য বাচ্চাদের তুলনায় নিরব প্রকৃতির হয়ে যেতে লাগলো। তার হাসি-কান্না-উচ্ছাস সবই অন্যদের চেয়ে আলাদা।
এর মাঝে একদিন মাঝরাতে মেঘের গর্জনে পুরো বাড়িটা কেঁপে উঠল, পৃথার ঘুম ভেঙে গেলো, ভয় পেয়ে সে মাকে জড়িয়ে ধরল। বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন সমান তালে চলতে থাকলো। হঠাত্ বিকট শব্দে কোনও কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ হল। পৃথার বাবা টর্চ হাতে বারান্দায় এসে দেখলো পাশের বাড়ির পুরো দেয়ালটি ভেঙে তাদের উঠোনের উপর পড়ে গেছে। মেজাজটাই বিগড়ে গেলো তার, পাশের বাড়ির আশফাককে এতবার বলার পরও ব্যবস্থা নিল না, ভেতরে এসে স্ত্রীর উপর রাগ ঝাড়ল, “আশফাককে এত করে বললাম যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তাই দেয়ালটি ভেঙে নতুন করে দিন, কিন্তু শুনল না”।
দেয়ালের অন্য প্রান্তে বিকট শব্দ শুনে আশফাক বেরিয়ে এসেছেন, বিদ্যুতের ঝলকানির মাঝে ভেঙে পড়া দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে হতাশার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এমনিতেই কিছুদিন হল তার ব্যবসার অবস্থা খারাপ যাচ্ছে আর এখন এই অবস্থা, নতুন করে এত বড় দেয়ালটি দিতে হবে, এ যে অনেক টাকার ব্যাপার। পরে নিজেকে নিজেই সান্তনা দিয়ে ভেতরে চলে গেল। ধীরে ধীরে ঝড়ের বেগ কমতে থাকলো।
পরদিন ভোরে পৃথার মা উঠোনে এসে হতাশ হয়ে গেলো, তার এত সাধের ফুলের বাগানে দেয়াল পড়ে সব তছনছ হয়ে গেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক দুর্লভ গাছের চারা সংগ্রহ করে অনেক শখ করে এই বাগান সে নিজ হাতে গড়েছিল, আর এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেল! তার সব রাগ গিয়ে পড়ল পাশের বাড়ির আশফাকদের উপর। অপরদিকে আশফাক এসে অভিযোগ জানালো যে, “দেয়াল ঘেষে বাগানে পানি দেবার জন্য আপনার যে নালা কেটে দিয়েছেন তার ফলেই দেয়ালটি দুর্বল হয়ে এই অবস্থা হয়েছে। আপনাদেরকে নালা সরিয়ে নিতে বলার পরও আপনারা দেয়াল ঘেষে থাকা নালাটি সরিয়ে নেননি”। এর পর দুই পরিবারের মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। পরে আশফাকের স্ত্রী সায়রা এসে স্বামীকে ভেতরে নিয়ে গেল। সায়রা পুরোদস্তুর গৃহিনী, সে কারো সাথে ঝামেলায় জড়ানো পছন্দ করেনা। সে স্বামীকে বোঝাল “হোক একটু কষ্ট আবার নতুন করে দেয়ালটি দিয়ে দাও”। আশফাকের মেজাজ তখন খারাপ হয়ে আছে, সে রেগে গিয়ে বলল, “ওরা তৈরি দেয়াল পেয়েছেতো তাই সুযোগ পেয়ে গেছে, কেন ওরা একটা সীমানা প্রাচীর দিতে পারেনা, সব দায়িত্ব কি আমাদেরই”? সায়রা স্বামীকে বুঝিয়ে ধীরে ধীরে শান্ত করল। আশফাক লোক ডেকে এনে ভেঙে পড়া দেয়ালের ইট গুলো সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করল। ঠিক করল দুই-তিন দিন পর দেয়াল তোলার জন্য মিস্ত্রী ধরাবে।
এসব তিক্ত ঘটনার পর পৃথার মা ব্যথিত মন নিয়ে অফিসে চলে গেল। পৃথা টিভি দেখছিল, হঠাত্ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল, পৃথা ফরিদাকে খুঁজতে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে ফরিদা ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে একপাশে ঝাড়ুটি রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে, পৃথা ডাকল “আপু তুমি ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠো আমরা খেলি”। ফরিদা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল তুমি কার্টুন দেখো….” পৃথা বোঝানোর চেষ্টা করল, “কারেন্ট নেইতো”। কিন্তু ফরিদার আর কোনও সাড়া না পেয়ে সে উঠোনে বেরিয়ে আসল। আপন মনে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, একসময় ভেঙে পড়া দেয়ালটির ফাঁকা যায়গায় এসে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে পাশের বাড়ির দিকে উঁকি দিল।
সায়রা ঘরের কিছু কাজ সেরে চুলোয় রান্না বসিয়ে কাপড় ধুতে আসলো। আশফাক বাইরে চলে যাবার পর ছেলে দুটিও স্কুল চলে যায়, একটি ক্লাস সেভেনে পড়ে, বড়টি পড়ে ক্লাস নাইনে। আশফাক ইদানিং দুপুরের খাবার বাইরেই খেয়ে নেয়, আর ছেলেরা বিকেলে স্কুল থেকে এসে খায়। সবাই চলে যাবার পর সায়রা বড্ড একা হয়ে যায়, মূলত বাড়ির কাজ করেই তার সময় কাটে। কাপড়ে সাবান ডলতে গিয়ে হঠাত্ ডান দিকে চোখ গেল, দেখল ছোট্ট একটি মেয়ে দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকে দেখছে। সায়রা তাকে কাছে ডাকল, “তোমার নাম বুঝি পৃথা? আসো, আমার কাছে আসো”। পৃথা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো, কিন্তু চলে গেলো না। সায়রা আবার ডাকল। পৃথা আস্তে করে বলল, “তুমি কে”? “আমি তোমার আন্টি হই” জবাবে সায়রা বলল। পৃথা কাছে আসছে না দেখে সায়রা এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো। ঘরে নিয়ে এসে বলল, “কি খাবে বল”? পৃথা নিরব রইল। সায়রা তাকে একটি আপেল ধুয়ে খেতে দিল এবং ঘরের কাজ করতে করতে পৃথার সাথে কথা চালিয়ে গেলো।
ফরিদা ঘুম থেকে উঠে পৃথাকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো, পুরো বাড়ি তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও না পেয়ে ভেঙে পড়া দেয়ালের জায়গাটি দিয়ে পাশের বাড়িতে আসলো, দেখলো সায়রা পৃথাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। ফরিদা হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল, “ভাবী ও আপনের কাছে কেমন করি আসলো? যাউক তাও খুজি পাইলাম, খুব পেরেশানির ভিতর ছিলাম, -আফাক কি জবাব দিম”। সায়রা বলল, “তুমি ওদের বাসায় থাকো? কোনও চিন্তা করনা, এখানে বস”, একটি পানির গ্লাস এগিয়ে দিল আর বলল, “পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা কর”। পৃথার খাওয়া শেষ হলে ফরিদা তাকে নিয়ে যেতে চাইলে সায়রা বলল, থাকুক না একটা দিন আমার কাছে”। “কিন্তু ভাবী.....আচ্ছা থাকুক কিন্তু ওর মা আসার আগে ওরে নিয়া যাইতে হবে”, উত্তরে ফরিদা বলল।
সন্ধার আগেই ফরিদা এসে পৃথাকে নিয়ে গেলো, যদিও তার যাবার ইচ্ছা ছিলনা। তার আগে সায়রার দুই ছেলে স্কুল থেকে ফিরে মায়ের সাথে হাসাহাসি করলো, “এইতো মা এতদিনে একটি মেয়ে পেয়ে গেছে.........”।
পরদিন, একই সময়ে পৃথা সায়রাদের বাসায় আসলো, ফরিদাও নিশ্চিন্তে যেতে দিল। কালকের পর পৃথার প্রাথমিক ভয় কেটে গেছে, সায়রার আন্তরিক ব্যবহারে সে সায়রাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে।
দুপুর দুটা, কলিং বেল বেজে উঠল, ফরিদা ভাবল, হবে কোনও ভিখিরি, ইদানিং ভিখিরিরা খুব বিরক্ত করছে। ফরিদা দরজা খুলে চমকে উঠল, “আফা আপনি আইজ এত তাড়াতাড়ি”? “শরীরটা আজ ভালো নারে ফরিদা, মাথাটা খুব ব্যাথা, তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম”, ভেতরে আসতে আসতে বলল পৃথার মা। ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলো “পৃথা কোথায়”? ফরিদা ভীত গলায় বলল, “পাশের বাড়ির ভাবীর কাছে গেছে”। কথাটা শুনে পৃথার মা ভীষণ চটে উঠল, “তুই জানিসনা ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল না, আগে থেকেই ওরা আমাদের দেখতে পারে না আর এখনতো দেয়াল পড়ার পর আরো......আল্লাহ না জানি আমার মেয়েটাকে নিয়ে কি করছে, যা তুই এখনই পৃথাকে নিয়ে আয়”। ফরিদা দৌড়ে গেলো পাশের বাড়িতে, সায়রার কোল থেকে পৃথাকে নিতে গেলো, পৃথা অসম্মতি জানালো, “আমি যাবনা”। ফরিদা জোর করতে লাগলো। সায়রা বলল, “থাকনা আমার কাছে, যেতে চাইছেনা যখন....” ভাবী ওর মা আসি খুব রাগ হইছে, নিয়া যাওয়াই লাগবে”। ফরিদা জোর করে পৃথাকে প্রায় কেড়ে নিলো সায়রার কোল থেকে, পৃথা কেঁদে উঠল, “আমি যাবনা....আমি যাবনা.....আমি আন্টির মেয়ে....”। কথাটা শুনে এবং ঘটনায় আকস্মিকতায় সায়রা হতবাক হয়ে গেলো, বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল, কিন্তু তার কি সাধ্য অন্যের মেয়েকে আটকে রাখার? বরং তা উচিত্ না।
পরদিন পৃথার মা অফিসে যাবার আগে ফরিদাকে বলে গেলো, “আজ যাতে পৃথা ওদের বাসায় যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখবি”। মা চলে যাবার পর পৃথা যেতে চাইলে ফরিদা তাকে আটকাল, বলল, “যাওয়া হবেনা, তোমার মা মানা করছে”। এই কথা শুনে পৃথা উঠোন থেকে ইটের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে ফরিদার দিকে ঢিল ছুড়তে লাগলো। কিছুতেই পৃথাকে বোঝাতে না পেরে শেষে কোলে করে সায়রার কাছে নিয়ে এসে বলল, “ভাবী একে থামাইতে পারতিছিনা, আপনের কাছে আসার জন্যে কানতেছে, কিন্তু এরে বুঝান, পরতেক দিন এইরম করলে কেমনে চলবে? আইজ দিয়া গেলাম, কলিং বেলের শব্দ পাইলে আবার নিয়া যাব”।
বিকেলে ফরিদা এসে পৃথাকে নিয়ে গেলো। পরদিন আশফাক মিস্ত্রী ডেকে এনে কতটুকু ইট-সিমেন্ট-বালু লাগবে তা হিসেব করে কাজে ধরিয়ে দিল। ভেঙে পড়া দেয়াল থেকে যেসব ইট কাজে লাগানো যাবে তা পরিষ্কারের জন্য আলাদা লোক লাগিয়ে দিল। বাড়ির পেছন দিক থেকে দেয়ালের কাজ এগিয়ে চলতে থাকলো। আশফাক মিস্ত্রীদের সাথে কাজ তদারকি করতে বাড়িতেই থাকলো। পৃথা নিয়ম করে সেদিনও আসলো, সিড়িতে পা রেখে সায়রার পাশে আশফাককে দেখে থমকে দাঁড়াল, সায়রা আশফাককে বলল, “পাশের বাড়ির মেয়ে, দেয়াল ভেঙে যাবার পর থেকে রোজ আসে, সারাদিন আমার সাথেই থাকে”। শুনে আশফাক হেসে ফেলল, “তোমার মনে হয় নিজের মেয়ে না থাকার অতৃপ্তি এখনো থেকে গেছে”। আশফাক পৃথাকে কাছে ডাকল, কিন্তু সে আসলো না। সায়রা এগিয়ে এসে পৃথাকে কোলে নিলো। আশফাক বেরিয়ে গেলো মিস্ত্রীদের কাছে।
দেয়াল তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, প্রথম দিন এক চতুর্থাংশ এগিয়ে গেলো। বড় দেয়াল হওয়ায় মিস্ত্রীরা পরামর্শ দিল দেয়ালটি দুটো অংশে ভাগ করতে, দুটো অংশের মাঝে একটা শক্তিশালী পিলার দেয়ার কথা বলল। আশফাক রাজি হল। বাড়ির পেছনদিক থেকে মাঝখানের পিলার পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনেই সম্পন্ন হয়ে গেলো।
মাঝখানে একদিন শুক্রবার থাকায় পৃথার মা বাড়িতে ছিল, তাই সে সায়রার কাছে আসতে পারেনি, শনিবার আবার সে সায়রার কাছে আসলো, ততদিনে দেয়ালের অর্ধেক কাজ শেষ। রবিবার বাকি অর্ধেকের কাজ শুরু হয়েছে। সকাল নটা থেকে তুমুল গতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। আজ পৃথার মা অফিস যেতে দেরি করছে, অফিসের উদ্দেশে বেরুতে আজ সকাল এগারোটা বাজিয়ে ফেলল। মা বেরিয়ে গেলে পৃথা উঠোনে এসে দেখলো দেয়াল দ্রুত বেড়ে চলেছে, দেয়ালের কিছু জায়গার উচ্চতা তার মাথা ছাড়িয়ে অনেক উপরে চলে গেছে আর কিছু জায়গার উচ্চতা আর কাঁধ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। অবাক চোখে, ব্যথিত মন নিয়ে সে দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে রইল।
এভাবে চলে গেলো অনেক সময়। পৃথার চোখের সামনে দেয়ালটির উচ্চতা বাড়তেই থাকলো, তার নিরব দৃষ্টি একসময় ঝাপসা হয়ে আসলো, দুচোখের কোন দিয়ে অবিরাম অশ্রুধারা ঝরতেই থাকলো।
সায়রা চুলোয় রান্না চড়িয়ে দিয়ে ঘরে এসে জানালা দিয়ে বেড়ে ওঠা দেয়ালটির দিকে দেখলো, তার বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেলো, সে দেয়ালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, বোঝা গেলো না তার চোখেও জল ছিল কিনা, হয়তো সে নিজের কাছেই নিজের চোখের জল গোপন করতে চাইল।
কিছু কথা: প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে এই গল্পটি লেখার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু আলসেমির কারণে লেখা হয়নি। "দেয়াল" আমার লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছোট গল্প, তাই ভুল-ত্রুটি থাকাটা স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটি হলে তা জানালে খুশি হব। গল্পে কাজের মেয়ে ফরিদা চরিত্রটির ভাষার ক্ষেত্রে রংপুর অঞ্চলের ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তবে সবাই যাতে সহজে বুঝতে পারেন এজন্য অপেক্ষাকৃত সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে তা সম্পূর্ন কাকতালীয়। ধন্যবাদ সবাইকে।
দেয়ালের ওপারের বাড়িতে থাকে এক দম্পতি, তারা দুজনেই চাকরি করে অন্য শহরে, সকাল হলেই দুজনেই তাড়াহুড়ো করে কর্মস্থলে বেরিয়ে যায়। তাদের ছোট্ট মেয়ে পৃথা, দেখতে পুতুলের মত, বয়স সাড়ে তিন, তাকে সকালের খাবার খাইয়ে মা বেরিয়ে যায় কাজে, ফেরে সেই সন্ধের পর। বাকিটা সময় কাজের মেয়ে ফরিদা তার দেখাশোনা করে। ফরিদার দেশ পৃথার নানার বাড়ির পাশের গ্রামে, পৃথার নানীই বাধ্য হয়ে ফরিদাকে এই বাড়ির জন্য দিয়েছেন, মেয়ে-জামাই দুজনে বাইরে গেলে ছোট্ট পৃথাকে কে দেখবে? প্রথমে দেখার দায়িত্ব তারই ওপর ছিল, কিন্তু তিনি নিজ সংসার ছেড়ে আর কতদিন থাকবেন? গ্রামের বাড়িতে এত কাজ যে তার ছেলের বউরা সব একা সামলাতে পারেনা, তাই মেয়ের বাড়ি গিয়ে বেশি দিন থাকা হয়ে ওঠে না।
পৃথার মায়ের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হবার পর মা যখন কর্মস্থলে যেত তখন সে নানীর কাছেই থাকতো, কখনো তার দাদী এসেও তার দেখাশোনা করত, কিন্তু বিপত্তি বাধে একটু বড় হবার পর মা বেরিয়ে যাবার পর-পরই কান্না জুড়ে দিত উচ্চস্বরে, কিছুতেই থামানো যেত না, এক সময় কাঁদতে-কাঁদতে ছোট্ট মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়তো। এভাবে কিছুদিন চলার পর পৃথা মাকে ছাড়া থাকতে অভ্যস্ত হতে লাগলো। এরপর পৃথার নানী ফরিদাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসে নিজে বিদায় নিলেন। এখন সকাল বেলা মা টিভিতে কার্টুনের চ্যানেল চালু দিয়ে কর্মস্থলে চলে যায়, ফরিদা ঘরের কাজকর্ম করে। এখন সমস্যা একটাই দুপুর বেলা পৃথাকে খাওয়ানো, খাবার নিয়ে ফরিদা সামনে গেলেই পৃথার একটাই কথা “আম্মু আসলে খাব”, কিছুতেই তাকে খাওয়ানো যায়না, অনেক ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাজা-রাণীর গল্প বলতে বলতে ধীরে ধীরে খাওয়াতে হয়। কিন্তু এভাবে একা থাকতে থাকতে পৃথা অন্য বাচ্চাদের তুলনায় নিরব প্রকৃতির হয়ে যেতে লাগলো। তার হাসি-কান্না-উচ্ছাস সবই অন্যদের চেয়ে আলাদা।
এর মাঝে একদিন মাঝরাতে মেঘের গর্জনে পুরো বাড়িটা কেঁপে উঠল, পৃথার ঘুম ভেঙে গেলো, ভয় পেয়ে সে মাকে জড়িয়ে ধরল। বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন সমান তালে চলতে থাকলো। হঠাত্ বিকট শব্দে কোনও কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ হল। পৃথার বাবা টর্চ হাতে বারান্দায় এসে দেখলো পাশের বাড়ির পুরো দেয়ালটি ভেঙে তাদের উঠোনের উপর পড়ে গেছে। মেজাজটাই বিগড়ে গেলো তার, পাশের বাড়ির আশফাককে এতবার বলার পরও ব্যবস্থা নিল না, ভেতরে এসে স্ত্রীর উপর রাগ ঝাড়ল, “আশফাককে এত করে বললাম যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, তাই দেয়ালটি ভেঙে নতুন করে দিন, কিন্তু শুনল না”।
দেয়ালের অন্য প্রান্তে বিকট শব্দ শুনে আশফাক বেরিয়ে এসেছেন, বিদ্যুতের ঝলকানির মাঝে ভেঙে পড়া দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে হতাশার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এমনিতেই কিছুদিন হল তার ব্যবসার অবস্থা খারাপ যাচ্ছে আর এখন এই অবস্থা, নতুন করে এত বড় দেয়ালটি দিতে হবে, এ যে অনেক টাকার ব্যাপার। পরে নিজেকে নিজেই সান্তনা দিয়ে ভেতরে চলে গেল। ধীরে ধীরে ঝড়ের বেগ কমতে থাকলো।
পরদিন ভোরে পৃথার মা উঠোনে এসে হতাশ হয়ে গেলো, তার এত সাধের ফুলের বাগানে দেয়াল পড়ে সব তছনছ হয়ে গেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক দুর্লভ গাছের চারা সংগ্রহ করে অনেক শখ করে এই বাগান সে নিজ হাতে গড়েছিল, আর এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেল! তার সব রাগ গিয়ে পড়ল পাশের বাড়ির আশফাকদের উপর। অপরদিকে আশফাক এসে অভিযোগ জানালো যে, “দেয়াল ঘেষে বাগানে পানি দেবার জন্য আপনার যে নালা কেটে দিয়েছেন তার ফলেই দেয়ালটি দুর্বল হয়ে এই অবস্থা হয়েছে। আপনাদেরকে নালা সরিয়ে নিতে বলার পরও আপনারা দেয়াল ঘেষে থাকা নালাটি সরিয়ে নেননি”। এর পর দুই পরিবারের মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। পরে আশফাকের স্ত্রী সায়রা এসে স্বামীকে ভেতরে নিয়ে গেল। সায়রা পুরোদস্তুর গৃহিনী, সে কারো সাথে ঝামেলায় জড়ানো পছন্দ করেনা। সে স্বামীকে বোঝাল “হোক একটু কষ্ট আবার নতুন করে দেয়ালটি দিয়ে দাও”। আশফাকের মেজাজ তখন খারাপ হয়ে আছে, সে রেগে গিয়ে বলল, “ওরা তৈরি দেয়াল পেয়েছেতো তাই সুযোগ পেয়ে গেছে, কেন ওরা একটা সীমানা প্রাচীর দিতে পারেনা, সব দায়িত্ব কি আমাদেরই”? সায়রা স্বামীকে বুঝিয়ে ধীরে ধীরে শান্ত করল। আশফাক লোক ডেকে এনে ভেঙে পড়া দেয়ালের ইট গুলো সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করল। ঠিক করল দুই-তিন দিন পর দেয়াল তোলার জন্য মিস্ত্রী ধরাবে।
এসব তিক্ত ঘটনার পর পৃথার মা ব্যথিত মন নিয়ে অফিসে চলে গেল। পৃথা টিভি দেখছিল, হঠাত্ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল, পৃথা ফরিদাকে খুঁজতে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে ফরিদা ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে একপাশে ঝাড়ুটি রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে, পৃথা ডাকল “আপু তুমি ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠো আমরা খেলি”। ফরিদা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল তুমি কার্টুন দেখো….” পৃথা বোঝানোর চেষ্টা করল, “কারেন্ট নেইতো”। কিন্তু ফরিদার আর কোনও সাড়া না পেয়ে সে উঠোনে বেরিয়ে আসল। আপন মনে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে লাগলো, একসময় ভেঙে পড়া দেয়ালটির ফাঁকা যায়গায় এসে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে পাশের বাড়ির দিকে উঁকি দিল।
সায়রা ঘরের কিছু কাজ সেরে চুলোয় রান্না বসিয়ে কাপড় ধুতে আসলো। আশফাক বাইরে চলে যাবার পর ছেলে দুটিও স্কুল চলে যায়, একটি ক্লাস সেভেনে পড়ে, বড়টি পড়ে ক্লাস নাইনে। আশফাক ইদানিং দুপুরের খাবার বাইরেই খেয়ে নেয়, আর ছেলেরা বিকেলে স্কুল থেকে এসে খায়। সবাই চলে যাবার পর সায়রা বড্ড একা হয়ে যায়, মূলত বাড়ির কাজ করেই তার সময় কাটে। কাপড়ে সাবান ডলতে গিয়ে হঠাত্ ডান দিকে চোখ গেল, দেখল ছোট্ট একটি মেয়ে দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকে দেখছে। সায়রা তাকে কাছে ডাকল, “তোমার নাম বুঝি পৃথা? আসো, আমার কাছে আসো”। পৃথা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো, কিন্তু চলে গেলো না। সায়রা আবার ডাকল। পৃথা আস্তে করে বলল, “তুমি কে”? “আমি তোমার আন্টি হই” জবাবে সায়রা বলল। পৃথা কাছে আসছে না দেখে সায়রা এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো। ঘরে নিয়ে এসে বলল, “কি খাবে বল”? পৃথা নিরব রইল। সায়রা তাকে একটি আপেল ধুয়ে খেতে দিল এবং ঘরের কাজ করতে করতে পৃথার সাথে কথা চালিয়ে গেলো।
ফরিদা ঘুম থেকে উঠে পৃথাকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো, পুরো বাড়ি তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও না পেয়ে ভেঙে পড়া দেয়ালের জায়গাটি দিয়ে পাশের বাড়িতে আসলো, দেখলো সায়রা পৃথাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। ফরিদা হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল, “ভাবী ও আপনের কাছে কেমন করি আসলো? যাউক তাও খুজি পাইলাম, খুব পেরেশানির ভিতর ছিলাম, -আফাক কি জবাব দিম”। সায়রা বলল, “তুমি ওদের বাসায় থাকো? কোনও চিন্তা করনা, এখানে বস”, একটি পানির গ্লাস এগিয়ে দিল আর বলল, “পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা কর”। পৃথার খাওয়া শেষ হলে ফরিদা তাকে নিয়ে যেতে চাইলে সায়রা বলল, থাকুক না একটা দিন আমার কাছে”। “কিন্তু ভাবী.....আচ্ছা থাকুক কিন্তু ওর মা আসার আগে ওরে নিয়া যাইতে হবে”, উত্তরে ফরিদা বলল।
সন্ধার আগেই ফরিদা এসে পৃথাকে নিয়ে গেলো, যদিও তার যাবার ইচ্ছা ছিলনা। তার আগে সায়রার দুই ছেলে স্কুল থেকে ফিরে মায়ের সাথে হাসাহাসি করলো, “এইতো মা এতদিনে একটি মেয়ে পেয়ে গেছে.........”।
পরদিন, একই সময়ে পৃথা সায়রাদের বাসায় আসলো, ফরিদাও নিশ্চিন্তে যেতে দিল। কালকের পর পৃথার প্রাথমিক ভয় কেটে গেছে, সায়রার আন্তরিক ব্যবহারে সে সায়রাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে।
দুপুর দুটা, কলিং বেল বেজে উঠল, ফরিদা ভাবল, হবে কোনও ভিখিরি, ইদানিং ভিখিরিরা খুব বিরক্ত করছে। ফরিদা দরজা খুলে চমকে উঠল, “আফা আপনি আইজ এত তাড়াতাড়ি”? “শরীরটা আজ ভালো নারে ফরিদা, মাথাটা খুব ব্যাথা, তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম”, ভেতরে আসতে আসতে বলল পৃথার মা। ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলো “পৃথা কোথায়”? ফরিদা ভীত গলায় বলল, “পাশের বাড়ির ভাবীর কাছে গেছে”। কথাটা শুনে পৃথার মা ভীষণ চটে উঠল, “তুই জানিসনা ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল না, আগে থেকেই ওরা আমাদের দেখতে পারে না আর এখনতো দেয়াল পড়ার পর আরো......আল্লাহ না জানি আমার মেয়েটাকে নিয়ে কি করছে, যা তুই এখনই পৃথাকে নিয়ে আয়”। ফরিদা দৌড়ে গেলো পাশের বাড়িতে, সায়রার কোল থেকে পৃথাকে নিতে গেলো, পৃথা অসম্মতি জানালো, “আমি যাবনা”। ফরিদা জোর করতে লাগলো। সায়রা বলল, “থাকনা আমার কাছে, যেতে চাইছেনা যখন....” ভাবী ওর মা আসি খুব রাগ হইছে, নিয়া যাওয়াই লাগবে”। ফরিদা জোর করে পৃথাকে প্রায় কেড়ে নিলো সায়রার কোল থেকে, পৃথা কেঁদে উঠল, “আমি যাবনা....আমি যাবনা.....আমি আন্টির মেয়ে....”। কথাটা শুনে এবং ঘটনায় আকস্মিকতায় সায়রা হতবাক হয়ে গেলো, বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল, কিন্তু তার কি সাধ্য অন্যের মেয়েকে আটকে রাখার? বরং তা উচিত্ না।
পরদিন পৃথার মা অফিসে যাবার আগে ফরিদাকে বলে গেলো, “আজ যাতে পৃথা ওদের বাসায় যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখবি”। মা চলে যাবার পর পৃথা যেতে চাইলে ফরিদা তাকে আটকাল, বলল, “যাওয়া হবেনা, তোমার মা মানা করছে”। এই কথা শুনে পৃথা উঠোন থেকে ইটের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে ফরিদার দিকে ঢিল ছুড়তে লাগলো। কিছুতেই পৃথাকে বোঝাতে না পেরে শেষে কোলে করে সায়রার কাছে নিয়ে এসে বলল, “ভাবী একে থামাইতে পারতিছিনা, আপনের কাছে আসার জন্যে কানতেছে, কিন্তু এরে বুঝান, পরতেক দিন এইরম করলে কেমনে চলবে? আইজ দিয়া গেলাম, কলিং বেলের শব্দ পাইলে আবার নিয়া যাব”।
বিকেলে ফরিদা এসে পৃথাকে নিয়ে গেলো। পরদিন আশফাক মিস্ত্রী ডেকে এনে কতটুকু ইট-সিমেন্ট-বালু লাগবে তা হিসেব করে কাজে ধরিয়ে দিল। ভেঙে পড়া দেয়াল থেকে যেসব ইট কাজে লাগানো যাবে তা পরিষ্কারের জন্য আলাদা লোক লাগিয়ে দিল। বাড়ির পেছন দিক থেকে দেয়ালের কাজ এগিয়ে চলতে থাকলো। আশফাক মিস্ত্রীদের সাথে কাজ তদারকি করতে বাড়িতেই থাকলো। পৃথা নিয়ম করে সেদিনও আসলো, সিড়িতে পা রেখে সায়রার পাশে আশফাককে দেখে থমকে দাঁড়াল, সায়রা আশফাককে বলল, “পাশের বাড়ির মেয়ে, দেয়াল ভেঙে যাবার পর থেকে রোজ আসে, সারাদিন আমার সাথেই থাকে”। শুনে আশফাক হেসে ফেলল, “তোমার মনে হয় নিজের মেয়ে না থাকার অতৃপ্তি এখনো থেকে গেছে”। আশফাক পৃথাকে কাছে ডাকল, কিন্তু সে আসলো না। সায়রা এগিয়ে এসে পৃথাকে কোলে নিলো। আশফাক বেরিয়ে গেলো মিস্ত্রীদের কাছে।
দেয়াল তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, প্রথম দিন এক চতুর্থাংশ এগিয়ে গেলো। বড় দেয়াল হওয়ায় মিস্ত্রীরা পরামর্শ দিল দেয়ালটি দুটো অংশে ভাগ করতে, দুটো অংশের মাঝে একটা শক্তিশালী পিলার দেয়ার কথা বলল। আশফাক রাজি হল। বাড়ির পেছনদিক থেকে মাঝখানের পিলার পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনেই সম্পন্ন হয়ে গেলো।
মাঝখানে একদিন শুক্রবার থাকায় পৃথার মা বাড়িতে ছিল, তাই সে সায়রার কাছে আসতে পারেনি, শনিবার আবার সে সায়রার কাছে আসলো, ততদিনে দেয়ালের অর্ধেক কাজ শেষ। রবিবার বাকি অর্ধেকের কাজ শুরু হয়েছে। সকাল নটা থেকে তুমুল গতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। আজ পৃথার মা অফিস যেতে দেরি করছে, অফিসের উদ্দেশে বেরুতে আজ সকাল এগারোটা বাজিয়ে ফেলল। মা বেরিয়ে গেলে পৃথা উঠোনে এসে দেখলো দেয়াল দ্রুত বেড়ে চলেছে, দেয়ালের কিছু জায়গার উচ্চতা তার মাথা ছাড়িয়ে অনেক উপরে চলে গেছে আর কিছু জায়গার উচ্চতা আর কাঁধ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। অবাক চোখে, ব্যথিত মন নিয়ে সে দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে রইল।
এভাবে চলে গেলো অনেক সময়। পৃথার চোখের সামনে দেয়ালটির উচ্চতা বাড়তেই থাকলো, তার নিরব দৃষ্টি একসময় ঝাপসা হয়ে আসলো, দুচোখের কোন দিয়ে অবিরাম অশ্রুধারা ঝরতেই থাকলো।
সায়রা চুলোয় রান্না চড়িয়ে দিয়ে ঘরে এসে জানালা দিয়ে বেড়ে ওঠা দেয়ালটির দিকে দেখলো, তার বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেলো, সে দেয়ালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, বোঝা গেলো না তার চোখেও জল ছিল কিনা, হয়তো সে নিজের কাছেই নিজের চোখের জল গোপন করতে চাইল।
কিছু কথা: প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে এই গল্পটি লেখার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু আলসেমির কারণে লেখা হয়নি। "দেয়াল" আমার লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছোট গল্প, তাই ভুল-ত্রুটি থাকাটা স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটি হলে তা জানালে খুশি হব। গল্পে কাজের মেয়ে ফরিদা চরিত্রটির ভাষার ক্ষেত্রে রংপুর অঞ্চলের ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তবে সবাই যাতে সহজে বুঝতে পারেন এজন্য অপেক্ষাকৃত সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। কারো সাথে মিলে গেলে তা সম্পূর্ন কাকতালীয়। ধন্যবাদ সবাইকে।
Labels:
গল্প
Saturday, October 9, 2010
নতুন করে শুরু হলো লেখালিখি
অনেকদিন পর আবার নতুন করে লেখা শুরু করলাম। সেই কবে ২০০৪ সালে ব্লগার॰কম এ একাউন্ট করেছিলাম। প্রথমে ব্লগার॰কম Pyra Labs নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ছিল। পরে ২০০৩ সালে গুগল ব্লগার॰কম কিনে নেয়। প্রথমে যে কোন ইমেইল ঠিকানা দিয়ে ব্লগার॰কম এ রেজিস্ট্রেশন করা যেত। পরবর্তীতে গুগল জিমেইল সহ অন্যান্য আরো অনেক সেবা চালু করে এবং তখন থেকে ব্লগার॰কম এ রেজিস্ট্রেশন করতে গুগল একাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। পুরোনো ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয় গুগল একাউন্ট তৈরি করে নিজের ব্লগার একাউন্টের সাথে যুক্ত করতে। আমাকেও এই কাজ করতে হয়েছে। ইয়াহু ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তন করে জিমেইল ঠিকানা যুক্ত করেছি, কিন্তু তখন ব্রাউজার এ কিভাবে বাংলা লিখতে হয় তা জানা ছিলনা। আমি ইংরেজিতে কাঁচা, সেই সাথে ইংরেজিতে মনের ভাব প্রকাশ করে শান্তি পেতাম না। তবে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আলসেমি। ইংরেজিতে একটি লেখা লিখে চার বছর কিছুই লিখলাম না। এর পর ২০০৮ সালে সামহোয়ারইনব্লগ॰নেট এর সাথে পরিচয় ঘটে, এটি একটি কমিউনিটি বাংলা ব্লগ। দেখলাম সবাই মন খুলে বাংলায় লেখালিখি করছে। আমিও লেখা শুরু করি সেখানে, এখানেই আমি ব্রাউজার এ বাংলা লিখতে শিখেছি। কিন্তু সেখানেও আলসেমির কারণে খুব কম লিখতাম। তবে যে কারণে বাংলা ব্লগ সাইট গুলোতে যাওয়া কমিয়ে দেই তা হলো- ব্লগাররা সামান্য কারণে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হয়, বাক স্বাধীনতার নামে জামায়াতপন্থীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে এবং স্বাধীনতা বিরোধী কথা বলে। অপরদিকে নাস্তিকরাও বাক স্বাধীনতার নামে নবী-রসুলদের নামে বাজে কথা বলে। আমি মধ্যপন্থী মানুষ, সকল ধর্মের মানুষকেই আমি সম্মান করি। ধর্মীয় মৌলবাদী আর নাস্তিক মৌলবাদী উভয়কেই আমি পছন্দ করিনা। বাংলা ব্লগ গুলোর অবস্থা যদি আবার কখনো সুস্থির হয় তবে আবার লিখব আশা রাখছি।
এখন ২০১০ সাল। ছয় বছর পর ব্লগার॰কম এ ফিরলাম। অনেকদিনের পুরোনো এবং পরিত্যাক্ত ব্লগের উঠোনে জমেছিল অনেক ধুলো, সেগুলো পরিষ্কার করে পছন্দ মত টেমপ্লেট বেছে নিলাম। এরপর অপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যুক্ত করলাম, অর্থ্যাত্ টেমপ্লেটটি নিজের মত করে নিলাম। এখন প্রশ্ন হল এত দিন পর কেন আবার নতুন করে? এই প্রশ্ন আমার নিজের কাছেও। উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম, পেলাম একটা উত্তর। কয়েকদিন আগে আমার জীবনে দুটো ঘটনা ঘটে গেল। একটি আনন্দের অপরটি দুঃখের। এই পরিস্থিতিতে আনন্দ করা উচিত্ নাকি মন খারাপ করে বসে থাকা উচিত্ ভেবে পাচ্ছিনা। মন খারাপের ঘটনাটির কারণে আনন্দের ঘটনাটি ম্লান হয়ে গিয়েছে। এ এক এমন পরিস্থিতি, এমন সময় নিজের সাথে কথোপকথন বড় প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই শুরু করলাম লেখা। আর কিছু মানুষের সাথে সব সময় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাদের এই ব্লগের ঠিকানা দিয়ে রাখবো তারা নিয়মিত এই ঠিকানা ভিজিট করে, তাহলে তারা আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়া এই ব্লগের মাধ্যমে আমার প্রিয় কিছু গান শেয়ার করব, সেই সাথে আমার প্রিয় ছবি, চলচ্চিত্র এবং বই নিয়ে আলোচনাতো থাকবেই। সবাই সাথে থাকুন। মন্তব্যের ঘরে ভালোলাগা-মন্দলাগা জানিয়ে দিন। শীঘ্রই আবার লিখব। শুভ কামনা রইল সবার প্রতি।
এখন ২০১০ সাল। ছয় বছর পর ব্লগার॰কম এ ফিরলাম। অনেকদিনের পুরোনো এবং পরিত্যাক্ত ব্লগের উঠোনে জমেছিল অনেক ধুলো, সেগুলো পরিষ্কার করে পছন্দ মত টেমপ্লেট বেছে নিলাম। এরপর অপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যুক্ত করলাম, অর্থ্যাত্ টেমপ্লেটটি নিজের মত করে নিলাম। এখন প্রশ্ন হল এত দিন পর কেন আবার নতুন করে? এই প্রশ্ন আমার নিজের কাছেও। উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম, পেলাম একটা উত্তর। কয়েকদিন আগে আমার জীবনে দুটো ঘটনা ঘটে গেল। একটি আনন্দের অপরটি দুঃখের। এই পরিস্থিতিতে আনন্দ করা উচিত্ নাকি মন খারাপ করে বসে থাকা উচিত্ ভেবে পাচ্ছিনা। মন খারাপের ঘটনাটির কারণে আনন্দের ঘটনাটি ম্লান হয়ে গিয়েছে। এ এক এমন পরিস্থিতি, এমন সময় নিজের সাথে কথোপকথন বড় প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই শুরু করলাম লেখা। আর কিছু মানুষের সাথে সব সময় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাদের এই ব্লগের ঠিকানা দিয়ে রাখবো তারা নিয়মিত এই ঠিকানা ভিজিট করে, তাহলে তারা আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়া এই ব্লগের মাধ্যমে আমার প্রিয় কিছু গান শেয়ার করব, সেই সাথে আমার প্রিয় ছবি, চলচ্চিত্র এবং বই নিয়ে আলোচনাতো থাকবেই। সবাই সাথে থাকুন। মন্তব্যের ঘরে ভালোলাগা-মন্দলাগা জানিয়ে দিন। শীঘ্রই আবার লিখব। শুভ কামনা রইল সবার প্রতি।
Subscribe to:
Posts (Atom)